ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

প্রকাশিত হলো নুরের রাজনৈতিক অভিলাষ থেকে জন্ম নেয়া কোটা আন্দোলনের আসল পরিচয়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৪ আগস্ট ২০২৪  

প্রকাশিত হলো নুরের রাজনৈতিক অভিলাষ থেকে জন্ম নেয়া কোটা আন্দোলনের আসল পরিচয়

প্রকাশিত হলো নুরের রাজনৈতিক অভিলাষ থেকে জন্ম নেয়া কোটা আন্দোলনের আসল পরিচয়

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন এক ফর্মুলা যোগ করে বিএনপি। তারেক রহমানের নির্দেশে ছোট সকল দলকে নিয়ে জাতীয় সরকারের ফর্মুলাতে তখন বেশ উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠেন গণঅধিকার পরিষদের নরুল হক নুর। ইসরাইল থেকে ফান্ড পেয়েছেন বলে অভিযুক্ত নুরের হাতে গড়া ছাত্র শক্তির মাধ্যমেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবার এলো সরকার পতনের ডাক। নুরের শিষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলাম ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে একত্রিত হবার আহ্বান জানিয়ে সেখান থেকে আরও একবার নিজেদের দাবি পরিবর্তন করে দিলেন সরকার পতনের ডাক।

মূলত কোটা আন্দোলন ১৪ জুলাইয়ের পর যখন রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে, তখন থেকেই বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে প্রতিটি কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তার প্রমাণ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতির বক্তব্য। 

যেখানে তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া প্রথম সংঘর্ষে তাদের উপস্থিতি ছিলো। ছাত্রলীগের ওপর এই সংঘর্ষের সম্পূর্ণ দায় চাপালেও রাজনৈতিক আরেকটি দলের ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতে সংঘর্ষের বিষয়ে এ সময় কৌশলে আলোচনা এড়িয়ে যান কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। এরও আগে থেকে সরকারের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভাকে কেন্দ্র করে একের পর এক দাবি পরিবর্তণ করে সমন্বয়কেরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিভ্রান্ত করতে প্রথমে আদালতের রায় বাতিলের দাবি করলেও সরকার যখন আদালতে মামলা করে সেই রায় স্থগিত করে তখন নির্বাহী বিভাগে কোটা সংস্কারের দাবি উত্থাপন আবার সরকার যখন আদালতের রায় পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তখন ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান করে আইন সভার মাধ্যমে কোটা সংস্কারের প্রস্তাব, এ সবই ছিলো ধোঁয়াশায় পূর্ণ। যা মূলত এই আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করা ও সংঘাত তৈরির জন্যই করা হয়। আন্দোলনের সমন্বয়করা জানতেন, কর্মসূচি দীর্ঘয়িত করলে জনদুর্ভোগের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। আর এরপরও সরকার পদক্ষেপ না নিলে জনগণ সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে। এমন উভয় মুখী সংকটের মধ্যে থেকেও শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে ধৈর্যের পরিচয় দেয় সরকার। যার সুযোগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও পরবর্তীতে তা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করে বারবার গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে যান আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। কিন্তু ইসরাইল সংযোগে রাজনৈতিক আলোচনায় থাকা নূরের শীষ্যদের মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক হিসেবে এই আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যাদের লক্ষ্যই ছিলো যে কোন উপায়ে আন্দোলনকে সংঘাতের পথে নিয়ে যাওয়া এবং লাশের রাজনীতির মাধ্যমে কোন এক পর্যায়ে সরকার পতনের ডাক দেয়া। নুরুল হক নুরের ইসরাইল ও মোসাদ সংযোগের বিষয়টিকে দেশের রাজনীতিতে অনেকেই গুরুত্ব না দিলেও সম্প্রতি দেশ জুড়ে চলমান নৈরাজ্যের পেছনে জামায়াত ইসলামের অর্থ, ইসরাইলের অর্থ, মেধা ও প্রযুক্তি এবং বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলো সরকারের বিপক্ষে গেলো নির্বাচন থেকে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকরা বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনের নেতৃত্বে শুরুতে যে কজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন তারা প্রত্যেকে অনেক আগেই এই রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হতে না চাওয়ায় ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু সেই স্থানগুলো দখল করে নিয়েছেন ছাত্রদলের অ্যাক্টিভিস্টরা।

আন্দোলনে সমন্বয়কদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নুরের ২৩ শিষ্যের মধ্যে রয়েছেন প্রধান সমন্বয়কদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলাম যিনি শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারেক রহমানের ফর্মুলা অনুসারে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন তিনি। এই ছাত্র নেতা ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব। এ ছাড়াও রয়েছেন যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুল্লাহ আল গালিব; তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ সোহেল জাহাঙ্গীর (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)।

ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম;  রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ও আহ্বায়ক সদস্য সোহাগ মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ও যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, সদস্যসচিব মো. আবু বাকের মজুমদার ও যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল হান্নান মাসুদ। এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির বাইরে আরও দুটি সংগঠনের নেতা রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে। সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা সারজিস আলম এক সময় ছাত্রলীগ করতেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৩ সদস্যের সমন্বয়ক ও ৪২ সদস্যের সহ-সমন্বয়ক রয়েছেন। এরমধ্যে সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, নিশিতা জামান নিহা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক সদস্য। তাদের মধ্যে রিফাত এই আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদলের পেজ থেকে সরাসরি লাইভ করেন যা প্রমাণ করে তিনি ছাত্রদলের অ্যাক্টিভিস্ট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থ আব্দুল কাদের বিএনপির এক্টিভিস্ট ও ভিপি নুরুল হক নুরের সমর্থিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য। এছাড়া গোপালগঞ্জের  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক হলেন নিঘাত রৌদ্র। তিনি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র গণমঞ্চের সদস্য।  ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন শাহীনুর সুমি। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাএ ফ্রন্টের ঢাকা মহানগরীর একজন নেতা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ডিপার্টমেন্টের  সাবিনা ইয়াসমিনও রয়েছেন কোটা আন্দোলকারীদের সমন্বয়ক হিসেবে। এছাড়া রয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সএম সুইট। যিনি ছাত্র ইউনিয়ন নেতা। একই বিশ্ববিদ্যালইয়ের ইয়াসিরুল কবির, তিনি ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন ইরিল সুলতানা আশা। তিনি বাম রাজনীতি ঘেঁষা। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সহ সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছে ও এমজি রব্বানী ও সাদিয়া মাহমুদ মিম ও পঙ্কজ রায়। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়ক হিসেবে আছেন সাজ্জাতুল্লাহ শেখ। তিনি বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া সংগঠনের সদস্য। 

ওপরের পদগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছাত্র আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা নিজেদের 'সাধারণ শিক্ষার্থী' হিসেবে পরিচয় দিয়ে শুরু থেকেই ধোঁকার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা বেশিরভাগই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। আর দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আন্দোলন দেখে বিশ্লেষকদের মত দিচ্ছেন যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই এখন এই সমন্বয়করা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের কাছ থেকে সরকার পতনের ডাক ঠিক আগেই তারেক রহমান একটি বক্তব্য প্রদান করেন। যেখানে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সরকার পতনের ডাক দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। আর এ কারণে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ৯ দফা দাবি আদায়ের জন্য সম্মেলনের ডাক দিলেও সেখান থেকে হঠাৎ করেই সরকার পতনের দাবি ঘোষণা করা হয়। তারা যে আগে থেকেই এই ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন, বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাদের তারেক রহমানের ফর্মুলা অনুসারে জাতীয় সরকারের ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে। অবশেষে অরাজনৈতিক সাধারণ ছাত্রের খোলস ছেড়ে এবার সরাসরি সরকার পতনের বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্মেলিত হলো 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন'এর সমন্বয়কগণ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়