ঢাকা, রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে কৃষি পর্যটন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৫ জুলাই ২০২৪  

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে কৃষি পর্যটন

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে কৃষি পর্যটন

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই চায়ের চাষ হচ্ছে। সুবিস্তৃত সবুজ বাগানে বদলে গেছে এলাকাটির প্রাকৃতিক দৃশ্য। পাশাপাশি হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার আকর্ষণে পর্যটকরা ভিড় করছে সেখানে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিষয়টি কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলছেন কৃষি পর্যটনপঞ্চগড় জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এখানে পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে।জেলার সমতল ভূমির চা-বাগানগুলো এতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

সমতলেও চায়ের চাষ হবে এমনটি দেশে কারোর ধারণায় ছিল না। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চগড় সফর করেন। তখন তিনি হিমালয়ের প্রায় পাদদেশের এই সমতল ভূমিতে চা চাষের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছিলেন।

প্রসংগত, চায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ের বেশ উঁচুতে অবস্থিত হলেও পঞ্চগড় থেকে এর দূরত্ব মাত্রই ১৩০ কিলোমিটারের মতো। দার্জিলিংয়ের মতো অত না হলেও বাংলাদেশে সাধারণত পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গেই শীতকালে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে।শেখ হাসিনার সেই সফরের পর স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চা চাষের জমির পরিমাণ।

এখন এই সমতলের চা পাল্টে দিচ্ছে পঞ্চগড়ের শত বছরের কৃষি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা। অতীতের একচেটিয়া ধান, পাট, আখের মাঠগুলোর বদলে দৃশ্যপটের বড় অংশজুড়ে চায়ের সবুজ গালিচা। তবে চা ঘিরে জেলার কৃষকদের মধ্যে যে স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল, মাঠের বাস্তবতায় তার চারাটি ততটা তরতাজা হয়ে বেড়ে ওঠেনি। কৃষক ও বড় চা কম্পানিগুলোর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব অমীমাংসিত রেখেই এই খাত প্রসারিত হচ্ছে।যাই হোক, চা-বাগান পঞ্চগড়ের চিরায়ত ভূদৃশ্যে এনেছে পরিবর্তন।

অন্যদিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার তথ্যটি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুয়ের আকর্ষণে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে পঞ্চগড়ের গুরুত্ব বাড়ছে। আর বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক উদ্যোক্তা কৃষি পর্যটনভিত্তিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার মধুবন গ্রামের রেজাউল করিম রেজা তাঁদের একজন।

মধুবন গ্রামটি সবুজ ও সুন্দর। এখানেই ব্যবসায়ী রেজাউল একটি কৃষি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলছেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কৃষিজমিতে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। চা-বাগানের পাশাপাশি এখানে হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ। আছে মাছের পুকুর ও গবাদি পশুর খামারও।

রেজাউল আগে থেকেই কোরবানি লক্ষ্য করে মোটাতাজা করার জন্য গরু পালন করেন। বর্তমানে তিনি পৃথক আরেকটি শেড তৈরি করেছেন ডেইরি খামারের জন্য। ছাগল ও ভেড়া লালন-পালনের জন্যও একটি শেড তৈরির কাজ চলছে।

রেজাউলের খামারটি ঘুরে দেখতে দেখতে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এরই মধ্যে এক কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছেন গরুর খামারটি গড়ে তুলতে। তিনি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে কৃষি বাণিজ্যও একটি টেকসই খাত হবে। সেই চিন্তা থেকেই কৃষিতে বিনিয়োগ তাঁর।

রেজাউলের তিনটি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। জানালেন, লাভ থাকছে ভালোই। পুকুরের পারঘেঁষে পেয়ারার বাগান। চার শ গাছে ফল এসেছে। রেজাউল জানালেন, পেয়ারা বেশ লাভজনক। সবচেয়ে বড় কথা, বাজারে সারা বছরই কম বেশি চাহিদা থাকে এই ফলের। খামারে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। চায়ের বাগান করেছেন ৫০ বিঘা জমিতে। রেজাউল এখন পর্যটকদের থাকার জন্য কটেজ তৈরি করছেন। এটি হবে বিদেশি কায়দার কৃষি পর্যটন উদ্যোগ।

কৃষিকে ঘিরে দেশজুড়ে এমন বহুমুখী উদ্যোগগুলোই ধীরে ধীরে বিকশিত করতে পারে শতভাগ বাণিজ্যিক কৃষি। আমার বিশ্বাস, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষি পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে। কর্মসংস্থান তথা অর্থনীতিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়