ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

অর্থনীতি দ্রুত গতিশীল করাই অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য : অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১১ আগস্ট ২০২৪  

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

যত দ্রুত সম্ভব অর্থনীতি গতিশীল করাই অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। দ্রুত সবকিছু আবার সচল করা হবে। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি প্রধান কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এর আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে এটিই তার প্রথম বৈঠক। এ সময় তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং সকলের খোঁজখবর নেন। কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন কারণেই দেশে অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করা। কারণ অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন।

আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ হতে দিতে চাই না। ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে নানান ধরনের সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকের সমস্যা রয়েছে, মূল্যস্ফীতিতে সমস্যা রয়েছে। আরও অনেক ধরনের জটিলতা রয়েছে। সবক্ষেত্রেই এখন নতুন করে কাজ করতে হবে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি বলি ছাত্র-জনতা সবার পক্ষ থেকে সেটি দেওয়া হয়েছে। এটি খুব কঠিন সময়।

আমাদের কনসার্ন হলো দেশের ছাত্র-জনতার সংগ্রামে এটি আসছে। আমাদের এখন আরেকটি প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা। এটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে কিন্তু সমস্যা আরও তৈরি হবে। 
আইনশৃঙ্খলা শুধু রাস্তাঘাটের না, ব্যাংকগুলো চালু করাসহ যেগুলো আছে, সেগুলো আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ঠিক করতে। বন্দর যেগুলো রয়েছে সেগুলো সচল করতে হবে। চ্যালেঞ্জ যেগুলো আছে তারমধ্যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সামষ্টিক ক্ষেত্রে, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এসব সমস্যা আমরা সবাই জানি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদটি সংবেদনশীল। তিনি পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন এটি ঠিক। এই বিষয়ে এখনই কিছু বলছি না। আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও তিনি এ সময় তুলে ধরেন। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বা দেশের যে কোনো আইন আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু তা মানা হয় না, যাদের মানানোর কথা তারা  সেটা করেননি, যাদের মানার কথা, তারাও মানেননি। তিনি বলেন, তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংকিং কমিশন হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হোক, এরপর সংস্কারের প্রসঙ্গ আসবে।

এখনই সংস্কার শুরু হলে তো মূল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। লাইনচ্যুত অর্থনীতি লাইনে আনতে কেমন সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয় না, মৌলিক কাজগুলো করতে বেশি সময় লাগবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম ছিল। একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়নি বরং গতি হারিয়ে ফেলেছিল। আমরা গতি বৃদ্ধি করব। মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি ছাড়াও উন্নয়নের কৌশলে ভুল ছিল।

মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের সুফল পায়নি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তার ফল কে পেয়েছে, কাদের কাছে টাকা গেছে, সেটাই মূল বিষয়। সরকার চায়, সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সব মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে। 
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে অফুরন্ত কর্মস্পৃহা আছে। গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই কাজে আসবে।  সুতরাং আমার মনে হয় নেতৃত্ব আর ব্যবস্থাপনাটা থাকলে সমস্যা হবে না। দ্রুত সবকিছু সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা একটা মসৃণ পথ করে যাব, খুব বেশিদিন তো আমাদের থাকার ইচ্ছা নেই। সেক্ষেত্রে পরে বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে পারে। 
উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়