স্মার্টফোনে আসক্তি কতটা ভয়াবহ
নিউজ ডেস্ক
সময় একাত্তর
প্রকাশিত : ১০:০৫ এএম, ৩ জুলাই ২০২৪ বুধবার
স্মার্টফোনে আসক্তি কতটা ভয়াবহ
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার বা ল্যাপটপে কাজ করার কারণে আপনারও কি কাঁধে ব্যথা বা ঘাড়ে ব্যথা হয়? যদি এটি ঘটে থাকে তবে এটি আপনার জন্য একটি বিপদের ঘণ্টা। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন ই-মেইল পড়তে, টেক্সট পাঠাতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ চেক করতে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে ১৪০০ ঘণ্টা।
আপনি যদি ক্রমাগত এইভাবে আপনার ঘাড় বাঁকিয়ে কাজ করেন, তবে ধীরে ধীরে এই জায়গার হাড় পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং এটি একটি বেঁকে যেতে শুরু করে। যার কারণে ব্যথা শুরু হয়। একে টেক্সট নেক সিনড্রোম বলা হয়। সম্প্রতি এই বিষয়টি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মার্কিন কাইরোপ্র্যাক্টর ডিন ফিশম্যান এটিকে একটি স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’- নাম দিয়েছেন।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের কারণ
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম মোবাইলের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত হলেও এটি বর্তমানের যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন ট্যাবলেটে সম্পাদিত বিভিন্ন কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে আছে- ওয়েব ব্রাউজ করা, গেম খেলা বা কোনো ডাটা প্রসেস করা। এ সময় স্বাভাবিক ভাবেই মাথা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। টিভি এবং কম্পিউটারের তুলনায় স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের স্ক্রিনশটগুলো দেখার জন্য সাধারণত টেবিল বা হাতে কাছাকাছি নিয়ে নির্দিষ্ট কোণে মাথা বাঁকা করতে হয়। বর্তমানের টাচস্ক্রিন সেটগুলো কাঁধ এবং মাথাকে আরও সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে আনে। স্মার্টফোনে ওয়েব ব্রাউজিং বা ভিডিও দেখার তুলনায় ম্যাসেজ করার সময় মাথার ভঙ্গি বেশি থাকে। ম্যাসেজ করার ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে দুই হাতের ব্যবহার এবং আঙুলগুলো স্ক্রিনে স্পর্শ করে রাখার দরকার পড়ে। এর ফলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে নিজের কাঁধ আরো সামনের দিকে বাঁকা করে রাখতে হয়।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের লক্ষণ
স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় তাৎক্ষণিকভাবে উপরের পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হবে। দিনের শেষ ভাগে বা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় ঘাড়ে বা কাঁধে তীব্র ব্যথা বাড়তে থাকবে। সাধারণত প্রাথমিকভাবে কাঁধে হালকা ব্যথা এবং চাপের মাধ্যমে এই ব্যথা তীব্রতার দিকে এগিয়ে যায়। নিচের দিকে তাকালে বা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মাঝে মাঝে অথবা ক্রমাগত মাথাব্যথা হবে। ধীরে ধীরে এই ব্যথা অসহনীয় হয়ে উঠবে। কোনো একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হবে। এমনকি দাঁড়ানো অবস্থা, কোন এক দিকে ঝুঁকে পড়া বা নড়াচড়াতেও সমস্যা হবে।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের প্রতিকার
১. মোবাইলে মেসেজ করার পরিমাণ কমাতে হবে। খুব প্রয়োজন প্রয়োজন হলে ফোনে কথা বলুন।
২. মোবাইল কেনার সময়ে লক্ষ রাখবেন মোবাইলটি যেন খুব ভারী না হয়। ভারী মোবাইল হাতে থাকলে পেশির উপর বেশি চাপ পড়ে। তাই কেনার আগে মোবাইলের ক্যামেরা, মেমরির, স্টোরেজের পাশাপাশি গ্যাজেটের ওজনের দিকেও নজর রাখতে হবে।
৩. একটি মোবাইল স্ট্যান্ড কিনতে পারেন। তার উপর মোবাইলটি রেখে ব্যবহার করলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।
৪. ফোন ব্যবহারের সময়ে ঘাড় নীচু বা বাঁকা করে না তাকিয়ে বরং ঘাড় সোজা রেখে ফোনটা চোখ বরাবর নিয়ে আসুন। এতে মাথা ও ঘাড়ের উপর চাপ কম পড়বে।
৫. কয়েকটি ‘ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ’ করতে পারেন। সর্বোপরি মেরুদণ্ডের সংলগ্ন পেশি সচল রাখতে নিয়ম করে কিছু যোগাসন করতেই হবে। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে শরীরচর্চা না করে উপায় নেই। যাদের ঘাড়, কোমর বা পিঠে খুব ব্যথা, তারা এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি ও আসন শুরু করুন। সময় মতো চিকিৎসা শুরু না হলে কিন্তু সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।