ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

কৌশলগত অংশীদারত্ব বিস্তৃত করায় সম্মত বাংলাদেশ-চীন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ১২ জুলাই ২০২৪  

কৌশলগত অংশীদারত্ব বিস্তৃত করায় সম্মত বাংলাদেশ-চীন

কৌশলগত অংশীদারত্ব বিস্তৃত করায় সম্মত বাংলাদেশ-চীন

বাংলাদেশ ও চীন নিজেদের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮ থেকে ১০ জুন চীনে তিন দিনের দ্বিপাক্ষিক সফর শেষ করার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দুই দেশের ২৭-দফা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে বুধবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। যৌথ বিবৃতিতে, উভয়পক্ষ অভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেছে, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠী বিষয়ক সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের নেতারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছেন। দুই দেশ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়া, উভয় দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তোলা, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে পরিকল্পনা করতে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরেকটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশ ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে, চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই সুপ্রতিবেশী ও ভালো বন্ধু। দেশ দুটি এই বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের সহস্রাব্দ পুরনো ইতিহাস ভাগভাগি করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সফরে সৌহার্দপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন এবং ব্যাপক ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের পক্ষ চীনা পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং চীনের ঐতিহাসিক অর্জন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন যুগের প্রবর্তনের প্রশংসা করেছে।

সর্বক্ষেত্রে নিজেকে একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে বাংলাদেশ চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা এবং চীনের জাতীয় পুনরুজ্জীবনের চীনা স্বপ্নকে যথাসময়ে বাস্তবায়নের প্রতি আন্তরিক সমর্থন প্রকাশ করেছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়েছে। চীনের পক্ষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনকে সাধুবাদ জানায় এবং নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দিকে বাংলাদেশের অবিচল অগ্রগতি’ অব্যাহত রাখতে সমর্থন প্রকাশ করেছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে ঐতিহ্যবাহী চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। উভয়পক্ষ একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমর্থনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে জোর দেয় যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজল্যুশন ২৭৫৮-এর কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত।

বাংলাদেশ এক-চীন নীতি ও তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষা করতে দেশটির প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনকে সমর্থন করে।

উভয়পক্ষ উচ্চ স্তরের মিথস্ক্রিয়ার গতি বজায় রাখতে ও কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে এবং বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে সফর, চিঠি বিনিময় ও বৈঠকের মাধ্যমে কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করতে সম্মত হয়েছে।

উভয়পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে চীনের সমর্থন এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের বিআরআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ প্রশংসা করেছে। চীনের পক্ষ থেকে বিআরআইতে যোগদান ও অংশ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে।

উভয়পক্ষ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতিতে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি বাড়াবে এবং বিদ্যমান সহযোগিতা প্রকল্পগুলোকে ত্বরান্বিত করবে উল্লেখ করে বলা হয়, চীনা পক্ষ এই অঞ্চলের সুষম ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করার জন্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। উভয়পক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পের আধুনিকীকরণ, ডবল পাইপলাইন প্রকল্প, আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্কের (এসএমপি) উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, ডিপিডিসি সিস্টেম নেটওয়ার্ক ও পিজিসিবির পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প মতো বড় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

দুই পক্ষই বাংলাদেশে ছোট আকারের পৌরসভার (পৌরসভা) জন্য টেলিটকের ৪-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ, নতুন জাহাজ সংগ্রহ, পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ফায়েকেল স্লাজ ব্যবস্থাপনার মতো প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে ও ঢাকা শহরের দাশেরকান্দি এসটিপি ক্যাচমেন্টের অধীনে সুয়ারেজ কালেকশন সিস্টেম উন্নত করতে সম্মত হয়েছে।

চীন বাংলাদেশে সাবওয়ে, মেট্রোরেল ও সড়ক, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, হাসপাতাল ও পানিসম্পদ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সক্রিয় অংশ নিতে চীনা উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, ৬ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার, ৯ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এবং বাংলাদেশে জাতীয় জরুরি অপারেশন সেন্টারের মতো প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার জন্য হাসপাতাল ও সেতু নির্মাণ এবং কনভেনশন সেন্টার সংস্কারের সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘চায়না এইড’-এর কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়